উৎপাদন কাকে বলে ?উৎপাদনের উপাদান সমূহ
What is Production ? Factors of Production
উৎপাদন কাকে বলে এ সম্পর্কে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ধ্রুপদী মত অনুযায়ী উৎপাদন একটি সামাজিক কাজ যার উদ্দেশ্য কোন এক বস্তুকে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তরিত করা। যেমন শিল্প কারখানায় যে দ্রব্য উৎপাদিত হচ্ছে সেখানে বস্তুর রূপান্তর ঘটছে কারণ কাঁচামালকে সেখানে উৎপন্ন দ্রব্যে রূপান্তরিত করা হচ্ছে।
অন্যদিকে আধুনিক অর্থনীতিবিদদের মতে উৎপাদন হচ্ছে বিনিময়ের মাধ্যমে উপযোগিতা সৃষ্টি করা। উপযোগিতা হলো অভাব মোচনের ক্ষমতা। এই উপযোগিতা সৃষ্টি করাই হলো উৎপাদন।
উৎপাদনের উপাদানসমূহ (factors of production)
কোন দ্রব্য উৎপাদন করার জন্য যে সমস্ত বিষয়ের প্রয়োজন হয় তাদের উৎপাদনের উপাদান বলে।
উৎপাদনের চারটি উপাদান রয়েছে জমি ,শ্রম ,মূলধন এবং সংগঠন। এই চারটি উপাদানের কোন একটিকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দিয়ে উৎপাদন সম্ভব নয়।
জমি - জমিকে উৎপাদনের প্রথম উপাদান বলে গণ্য করা হয়। জমি কথাটি অর্থনীতিতে একটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। জমি বলতে সব রকম প্রাকৃতিক সম্পদ কে বোঝায়।সেই অর্থে ভূমির উপরাংশ, জল সম্পদ, অরণ্য সম্পদ, খনিজ সম্পদ, পাহাড়-পর্বত, নদ নদী, মরুভূমি সকল কিছুকেই জমির মধ্যে ধরা হয়।
জমির কতগুলি বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেগুলি হল -
- জমি মনুষ্য সৃষ্ট নয় এটি প্রকৃতির দান।
- জমির যোগান স্থির। মানুষ চেষ্টা করেও জমির যোগান বৃদ্ধি করতে পারে না।
- জমি স্থানান্তর যোগ্য নয়, কেবলমাত্র জমি ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে মালিকানা বদল হতে পারে।
- জমির উৎপাদন ক্রমহ্রাসমান, উৎপাদনবিধির নিয়ম মেনে চলে। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট জমিতে অধিক পরিমাণে শ্রম এবং মূল্য নিয়োগ করতে থাকলে উৎপাদনের পরিমাণ শ্রম এবং মূলধন বৃদ্ধির তুলনায় কম হারে বাড়তে থাকে।
শ্রম - শ্রম বলতে মানুষের শারীরিক শ্রম ও মানসিক শ্রম উভয়কেই বোঝানো হয়।। শ্রমের দ্বারা প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহার উপযোগী করে মানুষের অভাব মেটায়।
শ্রমের কতকগুলো উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল -
- শ্রম সংরক্ষণ করা যায় না একদিন শ্রম না করলে সেই শ্রম অন্যদিনে প্রয়োগ করা যায় না ।
- শ্রম শক্তি বিক্রয়যোগ্য পণ্য। শ্রমিক শ্রমের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করে।
- শ্রম পুনরায় উৎপাদন করা যায়। একজন শ্রমিক খাদ্য বিশ্রাম প্রভৃতি পেলে তার শ্রম শক্তির ক্ষয় পূরণ হয়।
মূলধন - সাধারণভাবে মূলধন বলতে টাকাকড়ীকেই বোঝানো হয়।কিন্তু মূলধন কথাটি অর্থনীতিতে বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়। যে সমস্ত দ্রব্য সামগ্রী উৎপন্ন হচ্ছে তার একটা অংশ ভোগ্য দ্রব্য হিসেবে ভোগ করা হয় এবং অপর একটা অংশ উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয়।মোট উৎপাদনের যে অংশটি উৎপাদনের কাছে ব্যবহৃত হয় তাকে মূলধন বলা হয়। তাই অর্থনীতিবিদ Bohm Bawerk মূলধনকে উৎপাদনের উৎপাদিত উপাদান বলেছেন।
মূলধনের কতগুলি বৈশিষ্ট্য হল -
- মূলধন সঞ্চয়ের ফল। উৎপাদনের যে অংশ ভোগের কাজে ব্যবহৃত না করে সঞ্চয় করা হয় সেটাই মূলধন গঠনের সাহায্য করে।
- মূলধনকে সঞ্চিত শ্রম হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে কারণ দ্রব্যটি উৎপাদন করতে অতীতের শ্রম ব্যবহৃত হয়েছে।
সংগঠন - সুষ্ঠুভাবে উৎপাদন কার্যসম্পাদনের জন্য অন্য তিনটি উপাদানের সমন্বয় সাধন প্রয়োজন। আর এই সমন্বয় সাধনের কাজকেই সংগঠন বলে। সংগঠক উদ্যোগ নিয়েই কাজ করেন বলে তাকে উদ্যোক্তাও বলা হয়।
সংগঠনের বৈশিষ্ট্য গুলি হল -
- সংগঠকের প্রধান কাজ হল উৎপাদনের ঝুঁকি নেওয়া ।
- সংগঠক উৎপাদনের নীতি নির্ধারণ করে, কোন দ্রব্য কিভাবে, কি পরিমানে, কোন পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হবে তা সংগঠক ঠিক করে।
- উৎপাদন কাজে নিযুক্ত উপাদান সমূহের পারিশ্রমিক প্রদান করা সংগঠকের কাজ। সংগঠক জমির মালিককে খাজনা, শ্রমিককে মজুরি এবং ঋণ মূলধনের মালিক কে সুদ প্রদান করে থাকে।