ভারতে দারিদ্র্যতা (Poverty in India) বেঁচে থাকার জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে কিছু পরিমাণ দ্রব্য সামগ্রী ভোগ করতে হবে। যে সমস্ত দ্রব্যসামগ্রী ভোগ করে কোন একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি দৈনিক 2250 ক্যালোরি পেতে পারে সেই পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রীকে দারিদ্র্যের নিম্নতম মান হিসেবে ধরা হয়। বাজার থেকে এই সমস্ত দ্রব্য সামগ্রী কিনতে যা খরচ লাগে, টাকার অংকে সেটাই হলো নিম্নতম ভোগ ব্যয় এবং টাকার অঙ্কে এটাই হল দারিদ্র্য সীমার সংজ্ঞা। যে সমস্ত ব্যক্তি এই পরিমাণ ভোগ ব্যয় করতে পারে না তাদেরই আমরা বলি দরিদ্র। ভারতের পরিকল্পনা কমিশনের মতে 1960 থেকে 61 সালের মূল্যস্তর অনুযায়ী যেসব ব্যক্তির মাসিক ভোগ ব্যয় কুড়ি টাকার কম তারাই দারিদ্র্যসীমার নিচে আর যেসব ব্যক্তির মাসিক ভোগব্যয় কুড়ি টাকার অথবা তারও বেশি তারায দারিদ্র্যসীমার উপরে।এই হিসাবটি নিম্নতম মান অর্থাৎ 2250 ক্যালোরি সংগ্রহ করার জন্য যে ভোগ্যদ্রব্য ভোগ করতে হবে সেই হিসাব ধরেই করা হয়েছে। ক্যালরির মাধ্যমে দারিদ্র্য পরিমাপকে জৈবিক দৃষ্টিভঙ্গি বলা হয়। অনেকেই এই দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করেন না। তাদের বক্তব্য বিভিন্ন অঞ্চলের লোকেদের ...
পরিসংখ্যান কাকে বলে?/পরিসংখ্যানের বৈশিষ্ট্য/ পরিসংখ্যানের গুরুত্ব ও কার্যাবলী/পরিসংখ্যানের সীমাবদ্ধতা (what is statistics?/characteristics or features of statistics/ limitation of statistics)
পরিসংখ্যান কাকে বলে?/পরিসংখ্যানের বৈশিষ্ট্য/ পরিসংখ্যানের গুরুত্ব ও কার্যাবলী/পরিসংখ্যানের সীমাবদ্ধতা (what is statistics?/characteristics or features of statistics/ limitation of statistics)
ইংরেজি statistics শব্দের বাংলা রূপ হল পরিসংখ্যানবিদ্যা বা রাশিবিজ্ঞান। Statistics শব্দটি ল্যাটিন শব্দ 'status' এবং ইতালীয় শব্দ 'Statista' থেকে এসেছে।
বর্তমানে পরিসংখ্যান শব্দটি দুটি পৃথক অর্থে ব্যবহৃত হয় -
১) সংখ্যাগত তথ্য সমূহের সমাহার (A collection of numerical data)
২) তথ্য ব্যবহারের কৌশল (A method of dealing with data)
সেই কারণেই বিভিন্ন সমাজতাত্ত্বিক, অর্থনীতিবিদ, এবং পরিসংখ্যানবিদগণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পরিসংখ্যানকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন।
R. A. Fisher এর মতে পরিসংখ্যান হলো প্রয়োগিক বা ফলিত গণিতের একটি শাখা যা পর্যবেক্ষণ লব্ধ তথ্যের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়।
Croxton and cowden এর মতে পরিসংখ্যান হলো সংখ্যা তথ্যের সংগ্রহ উপস্থাপন এবং ব্যাখ্যা করার বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা।
রাশিবিজ্ঞানী Seligman এর মতে রাশি বিজ্ঞান হলো একটি বিজ্ঞান যার সাহায্যে সংখ্যা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি ,শ্রেণীবিন্যাস ,উপস্থাপন ,তুলনা এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে যে উদ্দেশ্যে সংখ্যা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয় সেই সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
বিভিন্ন রাশিবিজ্ঞানীর সংজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বিজ্ঞানের যে প্রক্রিয়ার দ্বারা সংখ্যা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি, শ্রেণীবিন্যাস, উপস্থাপন, তুলনা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় বা বিশ্লেষণধর্মী ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপযোগী সংখ্যাগত তথ্য সুশৃংখলভাবে লিপিবদ্ধ করা যায় তাকে রাশিবিজ্ঞান বা পরিসংখ্যানবিদ্যা (Statistics) বলে।
পরিসংখ্যানের বৈশিষ্ট্য (characteristics of statistics) -
১) পরিসংখ্যানকে সমষ্টির তথ্য হতে হয় ।কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা সম্পর্কহীন তথ্য ও রাশিবিজ্ঞানে বিবেচনা করা হয় না।
২) রাশি তথ্য কে একাধিক কারণ দ্বারা প্রভাবিত হতে হয় । একটি বিশেষ কারণের দ্বারা প্রভাবিত তথ্য ও রাশিবিজ্ঞানে বিবেচনা করা হয় না।
৩) রাশি তথ্য কে অতি অবশ্যই সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশিত হতে হয় ।সংখ্যায় প্রকাশ করা সম্ভব না হলে সেটি রাশিবিজ্ঞানে বিবেচনা করা হয় না।
৪) রাশি বিজ্ঞানকে নির্ভুল হাওয়া কাম্য ।এর জন্য প্রয়োজন তথ্য সংগ্রহ সঠিক পদ্ধতি ও সংশ্লিষ্ট বিষয় পরিমাপের যথাযথ একক।
৫) রাশিবিজ্ঞানে বিবেচিত হওয়ার জন্য রাশি তথ্য কে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হতে হয়।
পরিসংখ্যানের গুরুত্ব , ব্যবহার ও কার্যাবলী Importance/uses/functions of statistics -
বর্তমানে রাশিবিজ্ঞান রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের সঙ্গেই নিবিড়ভাবে সংযুক্ত। অর্থনীতি, জীববিজ্ঞান ,পদার্থবিদ্যা ,রসায়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য, দর্শন বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাশিবিজ্ঞানের প্রয়োগ ব্যাপক। এছাড়া ও চিকিৎসাশাস্ত্র ,ইঞ্জিনিয়ারিং,গবেষণাক্ষেত্র এমনকি যুদ্ধক্ষেত্রেও এর প্রয়োগ ঘটছে ।
১) পরিসংখ্যান বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ঘটনাকে সুনির্দিষ্ট রূপে উপস্থাপন করে ।
২)পরিসংখ্যান হলো সেই কৌশল যা বিভিন্ন আর্থসামাজিক বিষয়ের মধ্যেকার তুলনামূলক আলোচনার পথকে সুগম করে।
৩)অসংখ্য জটিল এবং বিস্তৃত তথ্য সহজ ভাবে উপস্থাপন করতে সাহায্য করে রাশিবিজ্ঞান।
৪) রাশিবিজ্ঞান যে কোন বিষয় সম্পর্কে মতামত গঠন এবং সেই মতামত প্রমাণে সাহায্য করে।
৫) বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহনের সাহায্যকারী উপাদান হিসেবে ও কাজ করে রাশিবিজ্ঞান।
৬)কোন এলাকার উন্নয়নমূলক নীতি নির্ধারণে পরিসংখ্যান সাহায্য করে।
৭) তথ্যের শ্রেণীবদ্ধকরণে সাহায্য করে। এর ফলে বিভিন্ন তথ্যের মধ্যেকার তুলনা ও ব্যাখ্যা সহজ হয়।
পরিসংখ্যানের সীমাবদ্ধতা ( limitation of statistics) -
রাশিবিজ্ঞান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানা বিষয়কে সাহায্য করলেও সমস্ত বিষয়ে বা সমস্ত ধরনের অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ করা যায় না।সেই জন্যই রাশিবিজ্ঞান বর্তমানে জনপ্রিয় বিষয় হলেও এর কিছু ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করা যায়। সেগুলি হল-
১)রাশিবিজ্ঞানে একটি বস্তু বা একজন ব্যক্তি বা একটি ঘটনার বিষয়বস্তু আলোচনা করা সম্ভব হয় না। রাশিবিজ্ঞান কেবলমাত্র সমষ্টির বিষয়ে আলোচনা করে।
২)রাশিবিজ্ঞান গুণগত তথ্য যেমন সততা ,সৌন্দর্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায় না। এটি মূলত পরিমাণগত রাশি তথ্য পর্যালোচনা করতে পারে ।
৩) পরিসংখ্যানের অধিকাংশ ক্ষেত্রে নমুনা নির্বাচনের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। নমুনা নির্বাচনে ভ্রান্তি ও পক্ষপাতিত্ব থাকলে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন ভুল হয়ে যায়।
৪)যেকোনো তথ্য যেকোনো পরিসংখ্যান কৌশলে ব্যবহার করা যায় না এর জন্য উপযুক্ত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন।
৫)রাশি বিজ্ঞানের সিদ্ধান্ত মূলত গড় মানের উপর প্রতিষ্ঠিত ।এই কারণে রাশিবিজ্ঞানে যে মান নির্ধারণ করা হয় সেটি সম্পূর্ণ সঠিক না হয়ে প্রায় সঠিক হয়ে থাকে।