ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা (Capitalist Economy)
যে ব্যবস্থা মানুষের মৌলিক সমস্যা সমাধানের জন্য উপাদান সংগ্রহ ও বন্টনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে,তাকে বলে অর্থব্যবস্থা।
অর্থব্যবস্থা কে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায় -
- ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা
- সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা
আমরা এখানে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা বা বাজার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য ,গুণাবলী এবং ত্রুটিগুলি আলোচনা করব ।
যে অর্থব্যবস্থায় সম্পত্তির উপর ব্যক্তিগত মালিকানা বজায় থাকে এবং যেখানে অবদানের ভিত্তিতে বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে দ্রব্য বন্টিত হয় এবং উৎপাদন বন্টন ইত্যাদির ক্ষেত্রে কোন সরকারি হস্তক্ষেপ থাকে না তাকেই ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা বলা হয়।
ধনতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থা বা বাজার ব্যবস্থার মৌলিক বৈশিষ্ট্য গুলি সংক্ষেপে আলোচনা করা হল-
ব্যক্তিগত সম্পত্তি :- বাজার অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানা অর্থাৎ ব্যক্তি জমি, বাড়ি, কলকারখানা, যন্ত্রপাতি এবং উৎপাদনের অন্যান্য উপাদানের মালিক হয়।
উদ্যোগের স্বাধীনতা :- এই ধরনের অর্থনীতিতে প্রত্যেক ব্যক্তি তার পছন্দমত উৎপাদনের ক্ষেত্র বা পেশা নির্বাচন করতে পারে।
সর্বাধিক মুনাফা অর্জন - ধনতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় উৎপাদনের যে সকল ক্ষেত্রে মুনাফা সর্বাধিক হয় উদ্যোক্তা সেই সমস্ত দ্রব্যই উৎপাদন করে অর্থাৎ মুনাফা অর্জনই হল এই ধরনের অর্থব্যবস্থার প্রধান উদ্দেশ্য।
ক্রেতার স্বাধীনতা - এই অর্থব্যবস্থায় ভোগকারী বা ক্রেতা ভোগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করে এবং উৎপাদক সেই সকল দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করতে চায় যা ক্রেতারা ক্রয় করতে চায়।
নিয়ন্ত্রণমুক্ত দাম ব্যবস্থা - এই অর্থব্যবস্থায়দাম মুনাফা প্রক্রিয়ার দ্বারা অর্থনৈতিক ক্রিয়া-কলাপ পরিচালিত হয়। সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে বাজারে যে দ্রব্যের চাহিদা বেশি কেবলমাত্র সেই দ্রব্য উৎপাদিত হবে। চাহিদা বেশি হলে ক্রেতারা বেশি দাম দেবে ফলে উৎপাদকের মুনাফাও সর্বাধিক হবে।
ধনতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থার গুণাবলী
দক্ষতা অনুযায়ী উৎপাদন - ধনতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় উৎপাদন মুনাফা ব্যবস্থার ওপর প্রতিষ্ঠিত বলে দক্ষতা অনুযায়ী উৎপাদন হয়। যে সমস্ত দ্রব্য উৎপাদনে উদ্যোক্তার দক্ষতা বেশি সেই সব দ্রব্যসামগ্রী বেশি পরিমাণে উৎপাদিত হয় তাহলে উদ্যোক্তা লাভবান হয়।
উৎপাদক ও ভোগ কারী স্বাধীনতা -এই অর্থব্যবস্থায় উৎপাদক ও ভোগকারী নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। ফলে ক্রেতারা সর্বোচ্চ তৃপ্তি পেয়ে থাকে এবং উৎপাদকরাও পছন্দ অনুযায়ী দ্রব্য উৎপাদন করে মুনাফা সর্বোচ্চ করতে পারে।
স্বয়ংক্রিয় অর্থব্যবস্থা - ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি দাম ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালিত হয়। দাম ব্যবস্থাই উৎপাদন, ভোগ, বিনিময়, বন্টন ইত্যাদি অর্থনৈতিক কাজ করে থাকে।
নতুন উৎপাদন পদ্ধতি আবিষ্কার- বাজার অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকার কারণে উৎপাদকরা অতিরিক্ত লাভের আশায় কম ব্যয়ে দ্রব্য উৎপাদনের চেষ্টা করে ফলে নতুন নতুন দ্রব্য বা নতুন নতুন উৎপাদন পদ্ধতির আবিষ্কার করতে থাকে।
ন্যূনতম উৎপাদন ব্যয় - উদ্যোগের স্বাধীনতা এবং অবাধ প্রতিযোগিতা থাকার জন্য উৎপাদকরা সর্বদাই সর্বনিম্ন ব্যয়ের মাধ্যমে উৎকৃষ্ট মানের দ্রব্য উৎপাদনের চেষ্টা করে।
ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার দোষ বা ত্রুটি
পুঁজিপতি শ্রেণীর উদ্ভব - ধণতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় অবাধ প্রতিযোগিতা থাকার কারণে উদ্যোক্তার সংখ্যা কমে গিয়ে শেষ পর্যন্ত মুষ্টিমেয় কিছু পুঁজিপতির উদ্ভব হয়। ফলে চড়া দাম, অতিরিক্ত মুনাফা উৎপাদন, ক্ষমতার অপূর্ণ ব্যবহার,সম্পদের অপচয় ইত্যাদি সমস্যা গুলি প্রকট হয়ে ওঠে।
সামাজিক কল্যাণ উপেক্ষিত - শুধুমাত্র মুনাফা অর্জনই প্রধান উদ্দেশ্য হওয়ার কারণে এই অর্থনীতিতে অনেক সময় অনিষ্টকর দ্রব্য উৎপাদন করা হয়। এছাড়া বাজারে টিকে থাকার জন্য উৎপাদকরা অকাম্য প্রতিযোগিতায় যুক্ত থাকে ফলে সামাজিক কল্যাণ উপেক্ষিত হয়।
ভোগকারীর স্বাধীনতা অনুপস্থিত - বাজার অর্থব্যবস্থায় ভোগকারীদের যে স্বাধীনতার কথা বলা হয় বাস্তবপক্ষে তা অনুপস্থিত। কারণ উৎপাদকরা বিভিন্ন বিজ্ঞাপন এবং প্রচারের মাধ্যমে ক্রেতাদের রুচি, পছন্দকে প্রভাবিত করে থাকে।
আয় সম্পদ বন্টনে বৈষম্য - সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা বজায় থাকায় মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির হাতেই সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়। যেটা সামাজিক স্বার্থের দিক থেকে শুভ নয় ।
SUCCESS TUTORIAL
Kethopole uttar kastha danga, sarsuna kolkata - 700061